আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চল আরাকান। এটি বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট নামে পরিচিত একটি প্রদেশ। খ্রিস্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর ধরে এর স্বাধীন সত্তা, সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা, রাজনৈতিক ঐতিহ্য ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। এর উত্তরে চীন ও ভারত, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তর ও পশ্চিমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী নাফ নদীর মধ্যসীমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম। যোগাযোগের সুবিধা ও ঐতিহ্যগত দিকদিয়ে মিয়ানমারের চেয়ে চট্টগ্রামই আরাকানের কাছাকাছি ও বন্ধুপ্রতীম অঞ্চল। প্রতিবেশী বাংলার সহায়তায় বিভিন্ন সময় এখানকার অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে একটি অভিনব এবং স্বতন্ত্র অধ্যায় বিনির্মাণে সক্ষম হয়েছিল। বিশেষকরে ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের রাজা নরমিখলা বার্মার রাজা মেঙ শো ওয়াই কর্তৃক স্বীয় পিতৃরাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলায় আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ চব্বিশ বছর বাংলায় অবস্থানের পর ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আরাকান পুনরুদ্ধার করেন। সেসময় আরাকানের তুলনায় বাংলার মুসলমানদের জীবনবোধ ও সংস্কৃতির মান উন্নততর ছিল বিধায় নরমিখলা স্বয়ং মুহাম্মদ সোলায়মান শাহ উপাধী ধারণ করে বাংলার মুসলমানদের অনুকরণে আরাকানে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিধিবিধান চালু করেন। বাংলার অনুকরণে শাসকদের মুসলিম নাম গ্রহণ, অশ্লীলতা ও সুরামুক্ত রাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠান পালন, বিচারব্যবস্থা কার্যকর করতে কাজী ও জল্লাদ প্রথার প্রচলনসহ মুসলিম রীতিনীতির বিভিন্ন অনুশাসনের প্রচলন করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলিম অমাত্যবর্গের অনন্য ভূমিকা ছাড়াও তাঁদের আর একটি বড় অবদান হলো, তাঁরা মুসলিম কবি সাহিত্যিকদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিমূল শক্ত করেছিলেন। মূলত খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলিম প্রভাবিত আরাকান অমাত্যসভায় মুসলমান কবিদের হাতেই বাংলা সাহিত্য পরিপুষ্টি অর্জন করেছিল, যার ফলাফল বহুমুখী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল।
Be the first to review “আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস”