#জনশুমারি ও গৃহগণনা#

আদমশুমারি
ভুমিকা: কোন দেশের লোক গণনাকে আদমশুমারি বলা হয়। সুদূর অতীতে বাইবেলের যুগেও এক রকমের আদমশুমারি প্রচলিত ছিলো। তবে আধুনিক কালে ১৮০১ সালেই ইংল্যান্ডে সর্রপ্রথম আদমশুমারি প্রচলিত হয়। ভারত উপমহাদেশে তার উদ্ভব ঘটে ১৮৭১ সালে। বর্তমান বিশ্বেও সকল সভ্য দেশেই আদমশুমারি প্রচলিত হয়েছে।
প্রয়োজনীয়তা : আদমশুমারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশে^ও অধিকতর উন্নয়নশীল দেশগুলো আইনানুগ ও বিধিবদ্ধ নিয়মের মধ্যে একে ধরে রেখেছে। আধুনিক জীবনের জটিলতা খুবই বেশে। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিও ফলে জীবনে ধারণের সমস্যায় বৈচিত্র্য ও জটিলতা দেখা দিয়েছে। সমস্ত সমস্যার অবসানের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো অবশ্য জনসংখ্যার অনুপাতে সামঞ্জস্যপূর্র হতে হবে। তাই প্রত্যেক দেশে লোক গণনার প্রয়োজন। আধুনিক জগতে আদমশুমারি মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে এক বিরাট অংশ অধিকার করেছে। কেবল লোকসংখ্যার গণনা নয়, তার সাথে আরো বহুবিধ আবশ্যকীয় হিসেব নিকেশের তালিকাও গৃহীত হয়ে এসেছে। মানুষের জীবন ধারণের রক্ষ্য সুখী জীবন যাপন করা। এর জন্য মানুষের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় রাখা প্রয়োজন। জীবনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বহুবিধ বিষয় জড়িত রয়েছে। এ সকল বিষয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি অবগত হতে পারলেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি সহজতর হতে পারে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধিও ফলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জনসংখ্যা নিরুপম করতে পারলে পরিবর্তিত সমস্যা সমাধানের ঊদ্যৈাগ নেয়া সম্বব।
ব্যবস্থা গ্রহন : আদমশুমারি গ্রহনের প্রস্তাব গৃহীত হওযার সাথে সাথে সরকার কর্তৃক নানাবিধ কর্মচারী নিয়োগকার্ষ শুরু হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আদমশুমারি প্রধান কর্মকর্তা প্রথম নিয়োগপত্র লাভ করে থাকেন। যিনি এ দায়িত্বপূর্ণ পদেও কার্ষভার গ্রহণ করে থাকেন তাঁকে কমিশনার বা মহাপরিচালক বলা হয়ে থাকে সমগ্র দেশকে কয়েকটি কেন্দ্রে ভাগ করে প্রত্যেক কেন্দ্রের প্রধান কর্মচারীর উপর বর্তানো হয়। তার অধীনে কথোগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপবিভাগ থাকে এবং ঐ সমস্ত উপবিভাগের কার্যভার পৃথক পৃথক ভাবে উপবিভাগীয় কর্মচারী উপর ছেওে দেওয়া হয। দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোক গনণার তালিকা প্রস্থত করা হয়ে থাকে। ঐ সমস্থ তালিকায় মানুষের বয়স, ধর্ম, পেশা ইত্যাদির কথা যথাষৈাগ্যভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। এরপর অপেক্ষাকৃত প্রদস্থ কর্মচারী তালিকা পরীক্ষা করে দেখেন এবং যথাযথ বিন্যাসের পর ঐসব তালিকা প্রধান কর্ম চারীর কাছে প্রেরণ করে থাকেন। এ কর্মচারীর মাধ্যমেই লোক গণনা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
আদমশুমারির বাস্তব অঙ্কটি হস্তগত না হাওয়া পর্যন্ত কোন সরকারই শাসনকার্ষ সুষ্ট ভাবে পরিচালনাকরতে পারে না। দেশের লোকসংখ্যার কতজন পুরুষ, কতজন নারী, কতজন শিশু , কতজন বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরী প্রগতির যুগে এসকল সরকারের পক্ষে অপরিহার্য হিসেব তালিকার অন্তভুক্ত হয়েছে। ঝর-ঝঙ্গা ঘূর্ণি বার্তা দুর্ভিক্ষ প্রভৃতির ফলে সময় সময় খাদ্য নিত্য প্রয়োজনয়ি দ্রবোর অভাব-অনটন খুবই স¦াভাবিক হয়ে উঠেছৈ। তদুপরি মানুষের জীবন ষাত্রার পদ্ধতি ও তার মান, এমনকি শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত ইত্যাদির হিসেব আজ সমস্তই আদমশুমারির অগরুপে ধরা হয়েছে। গো-মহিষাদি কৃষিকার্য, দেশের শিল্প সম্পদ এ সবও আদমশুমারির অঙ্গ।বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে তখন এদেশের লোকসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিলো ৭ কোটি ১৩ লক্ষ ১৬ হাজার ৫১৭ জন। দি¦তীয়বার গণনা করা হয় ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের ৫, ৬ ও ৭ তারিখে। নির্ভুল তথ্য পাওয়া না গেলেও এই গণনায় লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় কোটি হবে বরে অনুমিত। এবং তৃতীয়বার গণনা করা হয় ১৯৯০ সালে ।
উপসংহার : জাতীয় জীবনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য আদমশুমারি আবশ্যকতা বিদ্যমান। জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে জাতীয় পরিকল্পনা তৈরি করা। সম্পদ বন্টনের সময় বিভিন্ন এলাকার লোকসংখ্যার পরিমাণ জানা দরকার। সরকার যেমন জিনিস বন্টন করে তা-ও প্রতি জেলার লোকসংখ্যার অনুপাত হয়ে থাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে আঞ্চলিক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা করা হয়। বস্তুতপক্ষে দেশের কোন স্থানে কি প্রয়োজন তা জনসংখ্যার অনুপাতে নির্ধারিত হয়। তাছাড়া বিদেশের সাথে আমদানি ও রপ্তানির ব্যাপারে ও জনষংখ্যার সমস্যা জড়িত। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে সম্পদ কাজে লাগিয়ে কতোটুকু উদ্বত্ত পাবো তা যেমন লোক সংখ্যার মাধ্যমে জানা যায় তেমনি বিদেশ থেকে আমদানির ব্যাপারে ও আমাদের লোকসংখ্যার অনুপাতে সিন্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এজন্য কায়ক বছর অন্তর দেশে আদমশুমারির প্রয়োজন অত্যধিক।